জুলাই মাস আসলেই সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আয়কর দেওয়ার জন্য চিন্তা শুরু হয়ে যায়। আয়কর রিটার্ন মানেই অনেকের কাছে ঝামেলা, মাথাব্যথার বড় কারণ। সারা বছরের আয়ের ব্যায়ের হিসাবের খাতা খুলে বসাসহ নানাবিধ চিন্তা।
তবে যারা জিরো রিটার্ন জমা দিবেন তাদেরকে তেমন কষ্ট পোহাতে হয় না কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন যাদের টিআইএন (TIN) আছে তাদের জিরো রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। আপনার আয় থাক বা না থাক জিরো রিটার্ন জমা দিতেই হবে। তাই ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই পরিষ্কার ধারণা থাকা ভালো।
কিন্তু জানেন কী? আসলে বিষয়টা এত জটিল নয়। শুধু সঠিকভাবে অনলাইনে এসে নিচের ধাপগুলো অতিক্রম করে আপনি নিজে নিজেই জিরো রিটার্ন দিতে পারবেন।
জিরো রিটার্ন কী জিনিস?
আমি যদি এটা সংক্ষেপে বলি।
আপনার আয় যদি করযোগ্য সীমার নিচে থাকে তাহলেই জিরো রিটার্ন জমা দিতে হয়।
অর্থাৎ, আপনি সরকারকে বলছেন,
“ভাই, আমার আয় আছে কিন্তু কর দেওয়ার মতো বেশি নয়। তবুও নিয়ম মেনে সব হিসাব দিচ্ছি।”
শুনতে সহজ। আসলেই তাই।
কেন জমা দেওয়া দরকার?
আইন তাই বলে।
না দিলে ঝামেলা। জরিমানা তো আছেই… পাঁচ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে।
শুনে একটু ভয় লাগছে? লাগারই কথা।
কিন্তু এটাকে শুধু শাস্তি হিসেবে দেখলে ভুল হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো সবাইয়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা।
এতে ট্যাক্স ফাঁকি কমে। স্বচ্ছতা বাড়ে।
তাহলে ক্ষতি কোথায়? বরং লাভই তো।
কারা দিতে হবে?
সহজ উত্তর যাদের টিআইএন আছে তাদের সকলকেই এটি দিতে হবে।
হ্যাঁ, সবারই।
আপনার আয় কম হোক, বা না থাকুক রিটার্ন জমা দিতে হবে।
কিছু সীমা মনে রাখুন:
- পুরুষ: বছরে ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
- নারী: বছরে ৪,০০,০০০ টাকা
- সিনিয়র সিটিজেন: বছরে ৪,৭৫,০০০ টাকা
তাহলে যদি আপনার মাসিক আয় ২০,০০০ টাকা হয় (মানে বছরে ২,৪০,০০০)… নিশ্চিন্তে জিরো রিটার্ন দিতে পারবেন।
অনলাইনে কীভাবে জিরো রিটার্ন জমা দেবেন?
এখন আসি আসল কথায়।
ধাপ ১: কাগজপত্র হাতে নিন
টিআইএন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র, আর আয়-ব্যয়ের হিসাব।
এই তিনটা থাকলেই কাজ হবে।
ধাপ ২: etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
গুগল খুলুন।
এটি NBR এর ওয়েবসাইট।
“Online eReturn” এ ক্লিক করুন।
(একটু ধৈর্য ধরুন, সাইটটা অনেক সময় স্লো চলে। আমিও বিরক্ত হয়েছিলাম প্রথমবার।)
ধাপ ৩: লগইন/রেজিস্ট্রেশন
অ্যাকাউন্ট থাকলে লগইন করুন।
না থাকলে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন।
ধাপ ৪: ফর্ম পূরণ
বর্ষ সিলেক্ট করুন ২০২৫-২৬।
ঠিকানা লিখুন।
করমুক্ত আয়ের তথ্য থাকলে সেটাও দিন।
ধাপ ৫: আয়ের হিসাব
উৎস বেছে নিন।
যদি মাসে ২০,০০০ আয় করেন, বার্ষিক আয় ২,৪০,০০০।
করমুক্ত সীমার নিচে। তাই রিল্যাক্স।
ধাপ ৬: খরচ লিখুন
খাওয়া-দাওয়া, পোশাক, ভাড়া, যাতায়াত সব কিছুর একটা আনুমানিক খরচ দিন।
অতিরিক্ত খুঁটিনাটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। শুধু একটা যুক্তিসঙ্গত হিসাব দিলেই হবে।
ধাপ ৭: যাচাই করুন
আয় বনাম খরচ মিলিয়ে দেখুন।
খরচ যদি আয়ের চেয়ে বেশি হয়? সমস্যা নেই। করমুক্ত সীমার নিচে থাকলে জিরো রিটার্ন ঠিকই হবে।
ধাপ ৮: সাবমিট
সব ঠিক থাকলে “Submit Return” এ ক্লিক করুন।
তারপর একটা কনফার্মেশন আর রেফারেন্স নম্বর আসবে। সেটাই প্রমাণ।
কিছু বাড়তি তথ্য
এলাউন্স আছে। ছাড় আছে।
যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসাভাড়া ভাতা।
কিছু বিনিয়োগ থেকেও আয় করমুক্ত হতে পারে।
তবে যেহেতু এটা জিরো রিটার্ন এসব অনেক ক্ষেত্রে আপনার জন্য জরুরি নাও হতে পারে।
শেষ কথা
দেখলেন? আসলে এত কঠিন কিছু নয়।
হ্যাঁ, প্রথমে মাথায় ঝড় ওঠে।
“কীভাবে করব? ভুল হলে?” এই ভয়ে।
কিন্তু ধাপে ধাপে করলে… আরেকটু ধৈর্য ধরলে… সবকিছুই সম্ভব।
আমার পরামর্শ? আটকে গেলে সাহায্য চান। অভিজ্ঞ কারও কাছে কিংবা নিকটস্থ ট্যাক্স অফিসে। বা অনলাইনে খুঁজে দেখুন।
লজ্জার কিছু নেই। আমরা সবাই শিখছি।
আর হ্যাঁ, ট্যাক্স দেওয়া শুধু আইন মানা নয়, এটা দায়িত্বও বটে।
আমি একজন অডিটর। সরকারি চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন বিধি বিধান নিয়ে সব সময় স্টাডি করে থাকি। সরকারি সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র প্রায়শই পড়া হয়। তাই নিজের প্রাকটিক্যাল জ্ঞান আপনাদের সাথে শেয়ার করি।