ভ্যাট আইটি কর্তন ২০২৫-২০২৬

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা ভ্যাট এবং অন্যান্য কর কর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। এই পরিবর্তনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সহজ করা এবং কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করা। নতুন বাজেটে আনা পরিবর্তনগুলো মূলত

মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬-কে সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করার মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসমূহ

  • সংজ্ঞা পরিবর্তন: কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘আপিল ট্রাইব্যুনাল’ এবং ‘পণ্য ঘোষণা’ (যা পূর্বে ‘বিল অব এন্ট্রি’ নামে পরিচিত ছিল) এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে।
  • উৎসে মূসক কর্তন: উৎসে মূসক কর্তনকারী সত্তা বা সরবরাহ গ্রহীতা যদি নিবন্ধিত হন, তাহলে উৎসে কর্তনকৃত বা আদায়কৃত মূসক সংশ্লিষ্ট কর মেয়াদের দাখিলপত্রে বৃদ্ধিকারী সমন্বয় করবেন।
  • রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ: ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধন প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং রিফান্ড দাবির চাপ কমাতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করের হার ৩% থেকে কমিয়ে ২% করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য এই হার ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে।
  • দাখিলপত্র দাখিলের সময়সীমা: সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, ব্যাংক, বীমা এবং শূন্য রিটার্ন দাখিলকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কর মেয়াদ সমাপ্তির অনধিক ২০ দিনের মধ্যে দাখিলপত্র পেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ভ্যাট বিধিমালা ও প্রজ্ঞাপনের পরিবর্তনসমূহ

  • আয়কর সংক্রান্ত পরিবর্তন (আবগারি শুল্ক): ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর জন্য ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির উপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ১ লক্ষ টাকার উপর ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য ছিল।
  • ভ্যাটের হার পরিবর্তন: অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে। নির্মাণ সংস্থার সেবার ক্ষেত্রে এই হার ৭.৫% থেকে বেড়ে ১৫% হয়েছে।
  • উৎপাদন ও সেবা খাতের পরিবর্তন:
    • এলপিজি গ্যাস: উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৭.৫% করা হয়েছে।
    • আইসক্রিম: সম্পূরক শুল্ক ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে।
    • সিগারেট পেপার: আমদানিতে সম্পূরক শুল্কের হার ১৫০% থেকে ৩০০% এ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
    • কটন সুতা ও কৃত্রিম আঁশ: সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে।
    • ব্যাটারি ও ই-বাইক: দেশীয় উৎপাদনে উৎসাহ দিতে ব্যাটারি ও ই-বাইক উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে আগাম করসহ মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
    • হাসপাতাল শয্যা: হাসপাতাল শয্যা উৎপাদনের উপকরণ আমদানি ও স্থানীয় ক্রয়ের উপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
  • অন্যান্য পরিবর্তন:
    • উৎসে মূসক কর্তন: নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ‘কমিউনিটি সেন্টার’ সেবাটিকে উৎসে কর্তনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
    • কম্পিউটার মনিটর: ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

আয়কর (IT) সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসমূহ

  • ব্যক্তিগত করহার: স্বাভাবিক ব্যক্তি এবং হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ করবর্ষের জন্য করহার পরিবর্তন করা হয়েছে । প্রথম ৩,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর কোনো কর দিতে হবে না, পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকার উপর ১০%, এবং এরপর ধাপে ধাপে করের হার বাড়বে ।
  • করমুক্ত আয়ের সীমা: মহিলা করদাতা ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,২৫,০০০ টাকা । তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই সীমা ৫,০০,০০০ টাকা । গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত “জুলাই যোদ্ধা” করদাতার জন্য করমুক্ত সীমা ৫,২৫,০০০ টাকা ।
  • ন্যূনতম কর: করমুক্ত সীমার উপরে আয় থাকলে ন্যূনতম করের পরিমাণ হবে ৫,০০০ টাকা, তবে নতুন করদাতাদের জন্য এটি ১,০০০ টাকা ।
  • সারচার্জ: নীট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত থাকলে কোনো সারচার্জ দিতে হবে না । ৪ কোটির বেশি হলে সারচার্জের হার ১০% থেকে শুরু করে ৫০ কোটির বেশি হলে ৩৫% পর্যন্ত হবে ।
  • পরিবেশ সারচার্জ: কোনো ব্যক্তির একের অধিক মোটরগাড়ি থাকলে, বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ইত্যাদি বাণিজ্যিক যানবাহন ছাড়া প্রতিটি অতিরিক্ত গাড়ির জন্য সিসি অনুযায়ী ২৫,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে । তবে, ২০২৬-২৭ করবর্ষ থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য এই সারচার্জ আরোপ করা হবে না ।
  • রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা: স্বাভাবিক ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য আয়বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে । যদি কোনো করদাতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন, তবে তিনি কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত করহারের সুবিধা পাবেন না ।
  • উৎসে কর কর্তন:
    • কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার বা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়ার ওপর উৎসে কর ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে ।
    • সিকিউরিটিজের সুদের উপর উৎসে করের হার ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে ।
    • ভাড়ার উপর উৎসে কর ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে ।
    • বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে কর ৬% থেকে কমিয়ে ৪% করা হয়েছে ।
    • বিদেশি ক্রেতার এজেন্টকে দেওয়া কমিশনের উপর উৎসে কর ১০% থেকে কমিয়ে ৭.৫% করা হয়েছে ।

ভ্যাট আইটি কর্তনের হার ২০২৫-২০২৬

পিডিএফ ফাইল লিংক: গুগল ড্রাইভ

Leave a Comment