সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে বাধ্যতামূলক কর কর্তন

মূল বেতন কত হলে উৎসে কর কর্তন বাধ্যতামূলক?

বাংলাদেশের সব বেতনভুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এখন থেকে উৎসে কর (Tax Deduction at Source – TDS) কর্তন বাধ্যতামূলক হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে জারি করা নতুন নির্দেশনায় আয়কর আইন, ২০২৩ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী TDS-এর সীমা নির্ধারণ

আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৮৬(১)(চ) অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের সময় উৎসে কর কর্তন এখন আইনি বাধ্যবাধকতা। NBR চেয়ারম্যান ও IRD সচিব স্বাক্ষরিত আধা-সরকারি পত্রে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য:

  • মাসিক মূল বেতন ২৬,৭৮৫ টাকা বা তার বেশি হলে TDS প্রযোজ্য

নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য:

  • মাসিক মূল বেতন ৩০,৩৫৭ টাকা বা তার বেশি হলে TDS প্রযোজ্য

এই সীমা অতিক্রমকারী সকল সরকারি চাকরিজীবীর বেতন থেকে প্রতি মাসে উৎসে আয়কর কর্তন করা হবে।

কেন এই নতুন নির্দেশনা জারি করা হলো?

সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের মাসিক বেতন বিল থেকে কোনো আয়কর কর্তন করছেন না। এটি আয়কর আইন, ২০২৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং কর ফাঁকির সমতুল্য।

NBR এবং IRD এই অনিয়ম বন্ধ করতে এবং রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

কারা উৎসে কর কর্তন করবেন?

যে সকল সরকারি কর্মকর্তা আহরণকারী ও ব্যয়ণকারী কর্মকর্তা (DDO – Drawing and Disbursing Officer) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অথবা বেতন বিল প্রস্তুত বা স্বাক্ষর করেন, তাদের অবশ্যই:

  • করমুক্ত সীমা অতিক্রমকারী বেতনের উপর প্রযোজ্য করের গড় হার অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন করতে হবে
  • অন্য কোনো উৎস থেকে অগ্রিম আয়কর পরিশোধ হলে তা সমন্বয় করতে হবে
  • উৎসে কর কর্তনের পরই কেবল বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট এন্ড ফিন্যান্স অফিসারদের (CAFO) মাধ্যমে এই কর কর্তন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আয়কর আইন, ২০২৩: নতুন কর কাঠামোর মূল পরিবর্তন

সরকার সম্প্রতি ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৪ বাতিল করে আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করেছে। এই নতুন আইনে বেতন খাতের কর কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে:

একীভূত করমুক্ত সুবিধা:

  • বাড়ি ভাড়া
  • চিকিৎসা ভাতা
  • যাতায়াত ভাতা

এই সব ভাতা একত্রিত করে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা অথবা মোট বেতনের এক-তৃতীয়াংশ (যেটি কম) পর্যন্ত একক করমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

কর ফাঁকি রোধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই নতুন আয়কর আইন, ২০২৩ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। উৎসে কর কর্তনের এই বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা:

  • কর ফাঁকি রোধ করবে
  • রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করবে
  • সরকারি কর্মচারীদের কর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে
  • করব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পরামর্শ

যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতন নির্ধারিত সীমা (পুরুষদের জন্য ২৬,৭৮৫ টাকা এবং নারী ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ৩০,৩৫৭ টাকা) অতিক্রম করছে, তাদের উচিত:

১. নিজের DDO-এর সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করুন যে TDS সঠিকভাবে কর্তন হচ্ছে ২. বেতন বিল ও কর কর্তনের হিসাব সংরক্ষণ করুন ৩. বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় TDS সার্টিফিকেট ব্যবহার করুন ৪. অন্য কোনো উৎসে অগ্রিম কর পরিশোধ করলে তা DDO-কে অবহিত করুন

এই নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের করব্যবস্থা আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


সূত্র: অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) জারিকৃত আধা-সরকারি পত্র, আয়কর আইন, ২০২৩

Leave a Comment