সাধারণ ভবিষ্য তহবিল বিধিমালা, ১৯৭৯ হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নীতিমালা । বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এই বিধিমালা প্রণীত হয় । এটি সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
GPF তহবিলের সদস্যপদ ও চাঁদা
যোগ্যতা ও যোগদান: যেসব সরকারি কর্মচারী প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে যোগদানের জন্য বাধ্যতামূলক নন বা অনুমতিপ্রাপ্ত নন, তাঁরা সাধারণ ভবিষ্য তহবিলে যোগদানের যোগ্য বিবেচিত হন । অবসর গ্রহণের পর চুক্তিভিত্তিক পুনঃনিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা স্বেচ্ছাধীনভাবে এই তহবিলে যোগদান করতে পারেন । সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হলে বাধ্যতামূলকভাবে এই তহবিলের সদস্য হতে হয় । তবে, দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও চাইলে যোগদান করা যায় । ৫২ বছর বয়সে উপনীত হলে চাঁদা প্রদান বন্ধ করা যায় ।
চাঁদা প্রদানের নিয়মাবলি: সাময়িক বরখাস্তের সময় ছাড়া প্রত্যেক চাঁদাদাতা প্রতি মাসে তহবিলে চাঁদা দেবেন । ফরেন সার্ভিস বা বিদেশে প্রেষণে থাকাকালীনও চাঁদা প্রদান করতে হয় । ছুটি ভোগ করার সময় চাঁদাদাতা চাইলে চাঁদা প্রদান না করার অপশন নিতে পারেন । সাময়িক বরখাস্তের পর চাকরিতে পুনর্বহাল হলে বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ের চাঁদার সমপরিমাণ বা তার কম পরিমাণ চাঁদা এককালীন বা কিস্তিতে জমা দেওয়া যায় ।
চাঁদার হার: চাঁদাদাতা নিজেই তাঁর চাঁদার হার নির্ধারণ করতে পারেন, যা সর্বদা পূর্ণ সংখ্যায় হবে । সর্বনিম্ন চাঁদা হলো মূল বেতনের ৫% এবং সর্বোচ্চ চাঁদা হলো মূল বেতনের ২৫% । টাকার ভগ্নাংশ থাকলে তা পরবর্তী পূর্ণ টাকায় পরিবর্তিত হবে । প্রতি বছর ৩০শে জুনে নির্ধারিত চাঁদার হার পরবর্তী এক বছর অপরিবর্তিত থাকে ।
সুদ বা ইনক্রিমেন্টের নিয়মাবলি
সরকার প্রতি বছর তহবিলের জমার উপর একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ বা ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে । প্রতি বছরের শেষে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে সুদ হিসাব করা হয়:
- পূর্ববর্তী বছরের জমা: পূর্ববর্তী বছরের শেষ দিনের জমার উপর চলতি বছরে উত্তোলন করা অর্থ বাদ দিয়ে বাকি অংশের উপর ১২ মাসের সুদ দেওয়া হয় ।
- চলতি বছরের উত্তোলন: চলতি বছরে উত্তোলন করা অর্থের উপর বছরের শুরু থেকে উত্তোলনের পূর্ববর্তী মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সুদ দেওয়া হয় ।
- চলতি বছরের জমা: পূর্ববর্তী বছরের শেষ দিনের পর জমা করা অর্থের উপর জমার তারিখ থেকে চলতি বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সুদ দেওয়া হয় ।
- জমার তারিখ: বেতন থেকে চাঁদা কাটা হলে মাসের প্রথম দিনকে জমার তারিখ ধরা হয় । চাঁদাদাতা নিজে চাঁদা পাঠালে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা যদি মাসের ৫ তারিখের আগে তা পান, তাহলে ওই মাসের ১ তারিখকে জমার তারিখ ধরা হয়; অন্যথায়, পরবর্তী মাসের ১ তারিখকে ধরা হয় ।
GPF তহবিল থেকে অগ্রিম ঋণ গ্রহণ
নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে তহবিল থেকে অগ্রিম নেওয়া যেতে পারে । এই অগ্রিম বিভিন্ন প্রকারের হয় এবং তা মঞ্জুর করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষ রয়েছেন ।
অগ্রিম ঋণ গ্রহণ পরিমাণ ও শর্ত:
- সাধারণ অগ্রিম: গৃহ নির্মাণ বা বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য অগ্রিমের পরিমাণ চাঁদাদাতার তিন মাসের বেতন অথবা তহবিলে জমানো অর্থের অর্ধেক—এই দুটির মধ্যে যেটি কম, তার বেশি হবে না ।
- বিশেষ অগ্রিম: বিশেষ বিবেচনার ক্ষেত্রে তহবিলের সঞ্চিত অর্থের ৭৫% পর্যন্ত অগ্রিম নেওয়া যেতে পারে এবং সর্বোচ্চ তিনটি অগ্রিম একসাথে মঞ্জুর করা যায় ।
- গৃহ নির্মাণ অগ্রিম: গৃহ নির্মাণের জন্য ৩৬ মাসের বেতন বা তহবিলে সঞ্চিত অর্থের ৮০%—এই দুটির মধ্যে যেটি কম, তার বেশি অগ্রিম নেওয়া যাবে না । মেরামতের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ১২ মাসের বেতন বা সঞ্চিত অর্থের ৭৫%—এই দুটির মধ্যে যেটি কম, তার বেশি হবে না ।
- অফেরতযোগ্য অগ্রিম: চাঁদাদাতার ৫২ বছর বয়স হলে কৃষি জমি কেনাসহ যেকোনো প্রকৃত প্রয়োজনে অফেরতযোগ্য অগ্রিম মঞ্জুর করা যায় । এর পরিমাণ অগ্রিম মঞ্জুরের সময় তহবিলের মোট সঞ্চিত অর্থের ৮০% এর বেশি হবে না । এটি একাধিকবার নেওয়া যেতে পারে ।
অগ্রিম ফেরত: অফেরতযোগ্য অগ্রিম ছাড়া অন্যান্য অগ্রিম মাসিক সমান কিস্তিতে আদায় করতে হয় । কিস্তির সংখ্যা ১২ এর কম বা ৫০ এর বেশি হবে না । গৃহ নির্মাণ অগ্রিমের ক্ষেত্রে অগ্রিম নেওয়ার ১২ মাস পর থেকে বেতনের ১০% হারে কিস্তি আদায় শুরু হয় । অগ্রিমের মূল অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধের পর মাসিক ভিত্তিতে বার্ষিক ৫% হারে সুদ বা ইনক্রিমেন্ট পরিশোধ করতে হয় ।
তহবিল থেকে চূড়ান্ত অর্থ উত্তোলন
চাঁদাদাতা চাকরি ছেড়ে দিলে, অবসরে গেলে, বা পুনরায় চাকরির জন্য অক্ষম ঘোষিত হলে তহবিলে সঞ্চিত অর্থ উত্তোলনের যোগ্য হন । চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যরা এই অর্থ প্রাপ্য হন ।
অবসর-উত্তর ছুটি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
- পিআরএল: কোনো কর্মচারী প্রিলিমিনারি রিটারমেন্ট লিভ (পিআরএল) শুরু হলে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত সাধারণ ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা জমা দিতে পারেন এবং এই সময়ের জন্য মুনাফা প্রাপ্য হবেন ।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ: চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি পিআরএল শুরু হওয়ার কথা থাকে, তাহলে সেই তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত চাঁদা জমা দেওয়া যায় এবং মুনাফা পাওয়া যায় । এই ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নতুনভাবে স্বেচ্ছাধীন চাঁদাদাতা হিসাবে তহবিলে যোগ দিতে পারেন । এই ক্ষেত্রে, মুনাফা হিসাব করার সময় পূর্বে জমা দেওয়া অর্থ বিবেচনা করা হবে না ।
বিস্তারিত দেখুন: বিডিসার্ভিস রুল বইটি থেকে সরাসরি
আমি একজন অডিটর। সরকারি চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন বিধি বিধান নিয়ে সব সময় স্টাডি করে থাকি। সরকারি সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র প্রায়শই পড়া হয়। তাই নিজের প্রাকটিক্যাল জ্ঞান আপনাদের সাথে শেয়ার করি।